
সংবাদ সংস্থা: নিজের শহরেই ফের উদ্বাস্তু। প্রায় আড়াই বছর পরে সেই ভয়ঙ্কর রাতের স্মৃতি ফিরল বউবাজারে । ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলাকালীন ফের বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনে একাধিক বাড়িতে ধরলো ফাটল। রাস্তাতেও ফাটল ধরেছে বলে জানা গিয়েছে। যার জেরে আতঙ্কিত বাসিন্দারা । এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে বউবাজার এলাকার কয়েকটি বাড়ির দেওয়ালে চিড় ধরে । সন্ধে গড়াতে সেই চিড়গুলি আরও বড় আকার নেয় । মেট্রোর সুড়ঙ্গের জন্য বউবাজারের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়ায় বাসিন্দাদের তড়িঘড়ি তোলা হয়েছে হোটেলে। তাঁদের মধ্যে অশীতিপর বৃদ্ধও যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছে কচিকাঁচারাও। নিজের পছন্দের ঘর ছেড়ে হোটেলের একচিলতে পরিসরেই তাদের এখন আতঙ্কে সময় কাটছে। এই ঘটনার জন্য যাওয়া হয়নি স্কুলে। দেওয়া হল না পরীক্ষাও। সেন্ট পলসের ছাত্র নিকুঞ্জ সাউ। ক্লাস ফাইভে পড়ে। দিদি আকাঙ্ক্ষা। দু’জনেরই ঘুম উড়েছে মেট্রো রেলের কাজে বাড়ির ফাটলে। ১০ বছরের নিকুঞ্জর বৃহস্পতিবার অঙ্ক পরীক্ষা ছিল। বুধবারও বাড়ি ফিরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু, রাতেই আচমকা এই পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের হাত ধরে বইপত্র নিয়ে পথে নামতে হয়। অঙ্কের সব হিসেব তখন মাথায় উঠেছে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে রাতারাতি ঠাঁই হল হোটেলে। এদিন তার বন্ধুরা সবাই যখন পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন হোটেলের একচিলতে ঘরে সে অনিশ্চিতভাবে বসে আছে।নিকুঞ্জরই দিদি আকাঙ্ক্ষা। ওয়েল্যান্ড গোল্ডস্মিথ স্কুলের ছাত্রী। তারও এদিন স্কুল খোলা। কিন্তু, যাওয়া হয়নি। কবে সে যেতে পারবে, তাও জানা নেই। সবথেকে বড় দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের অশীতিপর বৃদ্ধ দাদু রতনলাল সাউকে। বয়স ও অসুস্থতাজনিত কারণে ভালো করে হাঁটাচলা করতে পারেন না। চোখের জ্যোতিও কমে এসেছে। কিন্তু, রাতে তাঁকেও কোনও রকমে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন অস্থায়ী ঠিকানায়। রতনলালের নিজের বাড়ি ছিল এটা। গতবারও ফাটলের কারণে বেশ কিছুদিন ঠাঁইনাড়া হয়েছিলেন। আবার সেই ঘটনা। কিডনি ও সুগারের রোগীকেও তাঁর ওষুধপত্র, প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘরছাড়া হতে হয়েছে। এখন নিজের বাড়ি ছেড়ে আবার কতদিন এই পায়রার খোপে বাস করতে হবে জানে না সাউ পরিবার। নিজের শহরেই ফের উদ্বাস্তু। ঘর ছেড়ে আবার উঠতে হল হোটেলে। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মেট্রোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। তার মধ্যেই বুধবার সন্ধেয় ফিরল ২০১৯ সালের অগস্ট মাসের সেই ভয়াবহ স্মৃতি। সেই সময় দুর্গাপিতুরি লেনে কাজ চলাকালীন প্রায় ৪০টি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছিল। ভেঙে দিতে হয়েছিল বেশ কয়েকটি বাড়িও। সেই পুরনো দুঃসহ রাতের স্মৃতিই ফিরলো যেন বছর আড়াই পরে।