
১৫০ বছর আগে আজই চলেছিল প্রথম ট্রাম নিজস্ব প্রতিবেদন: “রাস্তায় চলেচে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্ ধাপ্।” বিশ্বকবির স্বপ্নের কলকাতা আজও বিশ্বে পরিচিতি পায় ট্রামের শহর হিসাবে। প্রায় ১৫০ আগে ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা নাগাদ শিয়ালদহে এসে পৌঁছল ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ের ট্রেন। কাতারে কাতারে লোক নেমে দৌড়ল ট্রাম ধরতে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তখন দু’টো এক বগির ট্রাম। একটা সেকেন্ড ক্লাস, অন্যটা ফার্স্ট ক্লাস। প্রতিটি বগিতে ৪৫টি আসন। সাধারণ মানুষ হইহই করে উঠে পড়ল দ্বিতীয় শ্রেণিতে। তিল ধারণের জায়গা নেই। আর প্রথম শ্রেণিতে মেরেকেটে জনা পাঁচেক সাহেব। সেই ফার্স্ট ক্লাস ট্রাম অনায়াসেই যাত্রা শুরু করল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল দ্বিতীয় ট্রাম নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার তেজি ঘোড়াও সেটি টানতে পারছিল না। শেষে ঘোড়াকে চাবুক মেরে চালানো গেল দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রাম। এভাবেই পথ চলা শুরু কলকাতা তথা গোটা এশিয়ার প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রামের। উনিশ শতকের শেষ ভাগ,তিলোত্তমায় বাড়ছিল যানবাহনের চাহিদা। তখনই ব্রিটিশ প্রশাসনের মাথায় এসেছিল ট্রামের ভাবনা। শিয়ালদহ থেকে তৎকালীন সার্কুলার রোড ধরে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে একেবারে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতা হয়েছিল প্রথমে। দায়িত্বে ছিল জাস্টিস অব পিস নামক তৎকালীন পুরকর্তা। অস্ট্রেলিয়া থেকে তারা সব তেজি ঘোড়া নিয়ে আসে। ঠিক হয়, মূলত পণ্য পরিবহণের জন্য চলবে ট্রাম। কিন্তু ততদিনে আম বাঙালির মধ্যে উদ্দীপনা চরমে। ট্রাম চালানোর দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল ১৮৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। তারপর ২৪ ফেব্রুয়ারি মহালগ্নে প্রথম চলছিল ট্রাম। আজ প্রায় ১৫০ বছর পেরিয়ে কলকাতার ট্রাম তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই চালাচ্ছে।তাঁর লাইন আজ কলকাতার ছোট্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেশির ভাগ ট্রামের স্থান আজ পেয়েছে মিউজিয়ামে কিন্তু তাঁর পরেও আজও বাঙালির মনের মধ্যে ট্রাম স্বমহিমায় বিরাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।