পুনম ভট্টাচার্য: ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ সোভিয়েত রাশিয়াতে মহিলাদের জাতীয় ভোটাধিকার দেওয়া হয়। যদিও দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের পরে এটি পঞ্চম দেশ যে নারীদের মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। প্রথমদিকে লোকাল বডি নির্বাচনে এবং পরবর্তীকালে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অধিকার দেওয়া হয় মহিলাদের। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৯৮টি দেশের মধ্যে যেসব দেশে গণতন্ত্র আছে তারমধ্যে রোম (Vatican City) ছাড়া সবকটি দেশেই মহিলাদের এই অধিকার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সৌদি আরব মহিলাদের ভোটদানের অধিকার দিয়েছে যদিও সেই দেশে জাতীয় স্তরে ভোটগ্রহণ হয়না। অবশ্য প্রথম গণতন্ত্রের দেখা মেলে ৬০০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের এথেন্স-এ। ভারতবর্ষে ৫০০- ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ষোড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে মাত্র ৩টি মহাজনপদে (ভাজ্জি, মাল্লা ও অ্যাস্সকা) গণপরিষদ ছিল। গণতান্ত্রিক এই ব্যবস্থার প্রথম থেকেই মহিলাদের ভোটদানের অযোগ্য বিবেচনা করা হয়েছিল কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারণা ছিল মেয়েদের বুদ্ধি কম, বোঝে কম এবং এদের দ্বারা কিছু হবে না। এরপর দীর্ঘ আড়াই হাজার বছরের লড়াইয়ের ফসল আজকের নারী। কিন্তু এই ভোটের অধিকার কি নারীকে দিতে পেরেছে তার সম্পূর্ণ মর্যাদা? সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কি আজও সমান ভাবছে ছেলেকে ও মেয়েকে? তাহলে পরিসংখ্যান কেন উল্টো কথা বলেছে? প্রাকৃতিক ভাবে পুরুষের থেকে নারীর জীবনী শক্তি বেশি হওয়া সত্বেও ভারতবর্ষে নারী পুরুষের অনুপাত (৯২:১০০) কমছে কী করে? ভারতবর্ষে পূজিত দেবদেবীর মধ্যে ৮০ শতাংশই দেবী! দেবী হলেন আদর্শ গুণাবলীর আকর বা খনি। তাহলে আদর্শ গুণাবলী অধিকাংশই রয়েছে নারীর মধ্যে! কিন্তু এই গুণ আরোপ করছে কে? আদর্শ নারী হবেন লক্ষী স্বরূপা — যিনি নারায়ণের পদপ্রান্তে বসে নারায়ণের সেবা করবেন এবং ঘরে সংসার গুছিয়ে রাখবেন। কতজন সংসারের দুর্গা রূপে বা চন্ডী রূপে কন্যা ,মা, স্ত্রী বা বান্ধবীকে চান ? আদর্শ নারী এমন এক অস্তিত্ব যার কোন দোষ ত্রুটি থাকবে না ,যার কোনো চাহিদা থাকবে না এবং সর্বোপরি যার স্খলন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। পুরুষের নির্ধারিত মাপকাঠিতে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে নিজেকে ধন্য মনে করছে নারী! নারীর দোষ-গুণের বিচার করবে পুরুষ, নারীকে সুরক্ষা দেবে পুরুষ। এখন প্রশ্ন হলো পুরুষ সুরক্ষা দিচ্ছে কার থেকে? আজ নারী দিবসে তাই কিছু প্রশ্ন রেখে গেলাম সবার জন্য। আমি পুরুষ বিরোধী নই। আমি প্রণাম করি রাজা রামমোহন রায় কে যাঁর প্রচেষ্টা ছাড়া বন্ধ হত না সতীদাহ প্রথা (১৮২৯), আমি প্রণাম জানাই দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর মহাশয়কে যাঁর নিরলস পরিশ্রম ব্যতীত নারীরা শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশ করতে পারতো না। যাঁর উদ্যম ব্যতীত বিধবা বিবাহ আইন ( ১৮৫৬) পাশ হত না। কিন্তু আজকের নারীকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। আজকের নারীর মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। একজন পুরুষ যদি রোজগার করে সংসার প্রতিপালন করতে পারে তাহলে একজন নারীকেও এককভাবে সংসার প্রতিপালনে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে। আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। নারী চেতনাকে স্বাধীন হতে হবে । নিজের মর্যাদা রক্ষার লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে ।
পুনম ভট্টাচার্য: ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ সোভিয়েত রাশিয়াতে মহিলাদের জাতীয় ভোটাধিকার দেওয়া হয়। যদিও দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের পরে এটি পঞ্চম দেশ যে নারীদের মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। প্রথমদিকে লোকাল বডি নির্বাচনে এবং পরবর্তীকালে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের অধিকার দেওয়া হয় মহিলাদের। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৯৮টি দেশের মধ্যে যেসব দেশে গণতন্ত্র আছে তারমধ্যে রোম (Vatican City) ছাড়া সবকটি দেশেই মহিলাদের এই অধিকার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সৌদি আরব মহিলাদের ভোটদানের অধিকার দিয়েছে যদিও সেই দেশে জাতীয় স্তরে ভোটগ্রহণ হয়না। অবশ্য প্রথম গণতন্ত্রের দেখা মেলে ৬০০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের এথেন্স-এ। ভারতবর্ষে ৫০০- ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ষোড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে মাত্র ৩টি মহাজনপদে (ভাজ্জি, মাল্লা ও অ্যাস্সকা) গণপরিষদ ছিল। গণতান্ত্রিক এই ব্যবস্থার প্রথম থেকেই মহিলাদের ভোটদানের অযোগ্য বিবেচনা করা হয়েছিল কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ধারণা ছিল মেয়েদের বুদ্ধি কম, বোঝে কম এবং এদের দ্বারা কিছু হবে না। এরপর দীর্ঘ আড়াই হাজার বছরের লড়াইয়ের ফসল আজকের নারী। কিন্তু এই ভোটের অধিকার কি নারীকে দিতে পেরেছে তার সম্পূর্ণ মর্যাদা? সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কি আজও সমান ভাবছে ছেলেকে ও মেয়েকে? তাহলে পরিসংখ্যান কেন উল্টো কথা বলেছে? প্রাকৃতিক ভাবে পুরুষের থেকে নারীর জীবনী শক্তি বেশি হওয়া সত্বেও ভারতবর্ষে নারী পুরুষের অনুপাত (৯২:১০০) কমছে কী করে? ভারতবর্ষে পূজিত দেবদেবীর মধ্যে ৮০ শতাংশই দেবী! দেবী হলেন আদর্শ গুণাবলীর আকর বা খনি। তাহলে আদর্শ গুণাবলী অধিকাংশই রয়েছে নারীর মধ্যে! কিন্তু এই গুণ আরোপ করছে কে? আদর্শ নারী হবেন লক্ষী স্বরূপা — যিনি নারায়ণের পদপ্রান্তে বসে নারায়ণের সেবা করবেন এবং ঘরে সংসার গুছিয়ে রাখবেন। কতজন সংসারের দুর্গা রূপে বা চন্ডী রূপে কন্যা ,মা, স্ত্রী বা বান্ধবীকে চান ? আদর্শ নারী এমন এক অস্তিত্ব যার কোন দোষ ত্রুটি থাকবে না ,যার কোনো চাহিদা থাকবে না এবং সর্বোপরি যার স্খলন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। পুরুষের নির্ধারিত মাপকাঠিতে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে নিজেকে ধন্য মনে করছে নারী! নারীর দোষ-গুণের বিচার করবে পুরুষ, নারীকে সুরক্ষা দেবে পুরুষ। এখন প্রশ্ন হলো পুরুষ সুরক্ষা দিচ্ছে কার থেকে? আজ নারী দিবসে তাই কিছু প্রশ্ন রেখে গেলাম সবার জন্য। আমি পুরুষ বিরোধী নই। আমি প্রণাম করি রাজা রামমোহন রায় কে যাঁর প্রচেষ্টা ছাড়া বন্ধ হত না সতীদাহ প্রথা (১৮২৯), আমি প্রণাম জানাই দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর মহাশয়কে যাঁর নিরলস পরিশ্রম ব্যতীত নারীরা শিক্ষার আঙিনায় প্রবেশ করতে পারতো না। যাঁর উদ্যম ব্যতীত বিধবা বিবাহ আইন ( ১৮৫৬) পাশ হত না। কিন্তু আজকের নারীকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। আজকের নারীর মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। একজন পুরুষ যদি রোজগার করে সংসার প্রতিপালন করতে পারে তাহলে একজন নারীকেও এককভাবে সংসার প্রতিপালনে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে। আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। নারী চেতনাকে স্বাধীন হতে হবে । নিজের মর্যাদা রক্ষার লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে ।