এবারের বসন্তোৎসব বাগনানের কন্যাশ্রীদের তৈরি ভেষজ আবিরে 

Spread the love

সৌম্যদ্বীপ দাস: “খেলবো হোলি রং দেবো না তাই কখনও হয়…”। বসন্তের উৎসব যে রঙিন আবির ছাড়া ফিকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।আর এই রঙের উৎসবে আবির যদি হয় ‘ভেষজ’ তাহলে তো আর কথাই নেই। বর্তমানে আবিরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ায় কৃত্রিম আবিরে ছেয়ে গেছে বাজার-দোকান। যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরণের আবির তৈরিতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় রেড অক্সাইড, মেটানিল ইয়েলো, ম্যালাকাইট গ্রিন ছাড়াও সীসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক। যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যার ফলে দোলের পর অধিকাংশ মানুষই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে।তবে প্রাকৃতিক আবির বা ভেষজ আবির ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা থাকে দূরে। তাই দিন দিন বাজারে চাহিদাও বাড়ছে এই ভেষজ আবিরের। আর এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কন্যাশ্রী প্রাপক ৫০ জন ছাত্রীকে নিয়ে বাগনান-২নং ব্লকের বিডিও অফিসে হয়ে গেল ৫ দিনের ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির। বাগনান-পাশকুড়া অঞ্চলের একটা বড় অংশের মানুষের রুজি রোজগার চলে ফুল চাষ করে, যার মধ্যে বেশিরভাগটাই গাঁদা ফুল। হাওড়ার মল্লিকবাজারে অধিকাংশ ফুলও যায় এই অঞ্চল থেকেই। বসন্তকালে বছরের এই সময় গাঁদার দাম অনেকটাই কমে যায় তাই ফুল চাষীদের উৎসাহ দিয়ে বিকল্প পথে উপার্জনের পথ দেখাতেই জেলাশাসকের নির্দেশে বাগনানের ৫টি স্কুলের কন্যাশ্রী প্রাপক ছাত্রীদের নিয়ে ২-৬ মার্চ পর্যন্ত হয়ে গেল এই প্রশিক্ষণ শিবির। যেখানে গাঁদা, অপরাজিতা ও গোলাপ থেকে বানানো হয় ৫০ কেজি আবির যা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। লাল গাঁদা থেকে হলুদ আবির, হলুদ গাঁদার সাথে অপরাজিতা মিশিয়ে করা হয় সবুজ আবির, শুধু অপরাজিতা থেকে তৈরি হয় নীল আবির ও গোলাপ ফুল থেকে তৈরি করা হয় গোলাপি আবির। প্রশিক্ষণ শিবির নিয়ে বাগনান – ২ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও) জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, আবির শুধু হলিতে নয় সারাবছরই আনন্দ-উৎসবে কাজে আসে,আর ভেষজ আবিরের নেই কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তাই আগামীদিনে এই প্রশিক্ষণ শিবির যে বাকিদেরও উৎসাহিত করবে সে বিষয়ে তিনি আশাবাদী। তিনি আরও বলেন এই অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজারের ওপরে রয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী যাতে প্রায় ২৫ হাজার মহিলা যুক্ত যাদের অনেকেরই রয়েছে ফুলের চাষ। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ভেষজ আবির বানিয়ে আরও মহিলাদের স্বনির্ভর করতে তিনি যে পরিকল্পনা রাখছেন সে বিষয়েও জানান তিনি। ভেষজ আবির তৈরির রেওয়াজ আজকের নয়। তবে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু রাসায়নিক আবিরের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভেষজ আবির কতটা পেরে ওঠে সেটাই এখন দেখার।
Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।