ভরাট হচ্ছে সরস্বতী, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় পরিবেশ আদালত গড়লো কমিটি

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদন, ছবি- সৌম্যদ্বীপ দাস/ প্রতীকী চিত্র: হাওড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় মাটি, ছাই ফেলে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে সরস্বতী নদীর গতিপথ। বিশেষত অঙ্কুরহাটিতে এক প্রোমোটার (নির্মাণকারী) মাটি, ছাই ফেলে নদী জবরদখল করে রুদ্ধ করে দিচ্ছে এই ঐতিহাসিক সরস্বতীর যাত্রাপথ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি খতিয়ে করতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলো জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ। বিচারক বি. অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য শৈবাল দাশগুপ্ত এর বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, তদন্ত কমিটিতে রাজ্য এবং কেন্দ্র দুই তরফেরই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বরিষ্ঠ বিজ্ঞানীরা থাকবেন। এছাড়াও রাজ্য সেচ দফতরের একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও রাজ্য পরিবেশ দফতরেরও একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্তা থাকবেন। কমিটিকে চার সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু তলিয়ে দেখে রিপোর্ট পেশ করার কথাও বলা হয়েছে। জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নোডাল এজেন্সি করেছে এবং তদন্ত অভিযানে ফিল্ড ভিজিটের সময় কমিটিকে অভিযোগকারী সুভাষ দত্ত যে সঙ্গ দেবেন সে কথাও বলা হয়েছে। একসময় যে সরস্বতী ছিল হাওড়া হুগলি, দুই জেলার অন্যতম মূল বাণিজ্যপথ। সেই সরস্বতীই এখন নিজের নামটুকুই টিকিয়ে রাখতে লড়াই করছে। কোথাও নদীর কোনও অংশ গিয়েছে জবরদখলকারীদের কব্জায়।কোথাও আবার গড়ে উঠেছে কংক্রিটের নির্মাণ। আবার কোথাওবা আবর্জনার স্তূপে নদী গিয়েছে মজে। বর্তমান সরস্বতী নদীর বেহাল দশা দেখে অনুমান করার উপায় নেই স্ফীতকায়া সরস্বতীর আসল চেহারা। ২০০১-এ নদী বাঁচাতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। কিছু কাজও হয় খাতায় কলমে। কিন্তু বছর ঘুরতেই নদী সংস্কারের উদ্যোগ, আন্দোলন ঢাকা পড়ে যায় আঁধারে। তবে ৮ এপ্রিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছে সেই নির্দেশকে ঘিরে আবার আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন সরস্বতী নদী প্রেমীরা। হুগলির ত্রিবেণী সঙ্গমের গঙ্গা থেকে ৭৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাওড়ার সাঁকরাইলে গিয়ে সরস্বতী ফের ওই নদীতেই মিশেছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই নদীটির কার্যত কোনও অস্তিত্ব নেই। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের অভিযোগ, হাওড়ার বিভিন্ন অংশে সরস্বতী নদী ভরাটের যে কর্মকাণ্ড চলছে তারমধ্যে অন্যতম অঙ্কুরহাটিতে এক প্রোমোটার কর্তৃক নদীতে ছাই/মাটি ফেলে চলছে ভরাট নদী ভরাটের কাজ। এ প্রসঙ্গে সুভাষ দত্ত জানান,কমিটি প্রতিটি সাইট ভিজিট করে পিটিশনের প্রতিটি অভিযোগ নদী ভরাট থেকে অবৈধ নির্মাণ কার্য খতিয়ে দেখবে এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানাবে ট্রাইবুনালকে। এছাড়াও নদীর জলের নমুনাও তারা নেবেন পরীক্ষার জন্য। তিনি আরও জানান, সরস্বতী নদীকে কেন্দ্রের নমামি গঙ্গা প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি সে বিষয়টি তিনি বোর্ডের নজরে নিয়ে আসেন। যারপর বোর্ড সরস্বতী নদীকে নমামি গঙ্গার অন্ত্রভুক্ত করা যায়না কিনা সে বিষয়টিও দেখতে বলেছে। গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যর নিযুক্ত আইনজীবী শিবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন,“কমিটি তাদের রিপোর্ট দাখিল করলে রাজ্য আদালতের নির্দেশ অনুসারে কাজ শুরু করবে।” আমজনতা থেকে পরিবেশবিদ সকলেরই দীর্ঘদিনের দাবি, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে দ্রুত সংস্কার করে পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক হাওড়া-হুগলির ‘লাইফলাইন’ সরস্বতী নদীকে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই কমিটি গঠনের পর আবার আশায় বুক বাঁধছেন তাঁরা।
Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।