রহস্যময় নোয়াদার ঢাল

Spread the love

তথ্য ও ছবি সৌজন্যে- পূর্ব রেল: এখানে শীতকালে ভোর হয় কুয়াশার চাদর গায়ে মেখে। স্টেশনের বাইরে তাকালে দেখা যায় দূরে ধানক্ষেতের উপর কুয়াশার চাদর ভেসে আছে। একটু পরেই সেই চাদর ভেদ করে আদিগন্ত ধানক্ষেতের উপর এসে বেঁধে রোদের বর্শা। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হয় দূরের এক তটরেখা। যা আসলে অনেক দূরের এক রাস্তা। পূর্বরেলের হাওড়া বিভাগের সাহেবগঞ্জ লুপে অবস্থিত, চেনা শহর থেকে দূরে, দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত ও সবুজ সমারোহের মাঝে দাড়িয়ে থাকা ২টি প্লাটফর্ম বিশিষ্ট এই স্টেশনটির প্রাকৃতিক শোভা অতুলনীয়। বিশেষ করে বসন্তে যেন স্বর্গীর রূপ ধারণ করে। ফরাক্কায় সেতু নির্মাণের সময় বর্ধমান – রামপুরহাট শাখার উপর একাধিক ‘ক্রসিং স্টেশন’ গড়ে তুলেছিল রেল। সেইরকমই একটি স্টেশন নোয়াদার ঢাল। হাওড়া থেকে প্রায় ১৩৪ কিলোমিটার দূরে এই স্টেশনে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা থেকে কিছু বেশি। যদিও শিয়ালদহ থেকে এর দূরত্ব ১৪৫ কিলোমিটার আর সময় লাগে তিন ঘন্টা থেকে সামান্য বেশি। বর্তমানে এই স্টেশনে একটি এক্সপ্রেস ট্রেন সহ মোট ৬টি ট্রেন থামে। এলইডি আলো, বসবার ব্যবস্থা, পানীয় জল ও নির্মানাধীন ওভারব্রিজ সহ নোয়াদার ঢাল প্রায় একটি পূর্নাঙ্গ স্টেশন। পূর্ব বর্ধমান জেলার এই গ্রামের রেল লাইনের গা দিয়ে চলে যাওয়া সরু গ্রাম্য পথ ধরে এগিয়ে গেলে কিছু দূরে দেখা যায় অসংখ্য বটগাছের ভিড়ে বিশেষ একটি বটগাছের চারিদিক বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে শ্বেত পাথরে বাঁধানো এবং বটগাছের গোড়ায় লাল কাপড় জড়ানো। জবা, অপরাজিতা, গাঁদাফুলের মালা ঝুলছে বেদীর আশে পাশে। ধুপ-ধুনোর গন্ধে এখানে যেন এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করে। এটি আসলে “অন্ধ মা তলা” বা “অন্ধ কালীতলা মন্দির”। এই মন্দির নিয়েও রয়েছে এক টুকরো গল্প। কথিত আছে, এই গ্রামে বহু দিন আগে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বহুমূল্য দ্রব্য চোরেরা অপহরণ করে এই স্থানে লুকিয়ে রাখে। সেই বাড়ির গৃহকর্তাকে দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানান যে এই স্থানে তাঁর অপহৃত জিনিস রয়েছে এবং অপহরণকারীরা দেবীর অভিশাপে অন্ধ হয়ে আছে। দেবীর কৃপাতে গৃহকর্তা তাঁর বহুমূল্য দ্রব্যাদি ফিরে পান এবং অপহরণকারীদের ক্ষমা করেন। সেই থেকে দেবী এই স্থানে “অন্ধ কালী” রূপে গ্রামবাসীদের পূজা গ্রহণ করছেন। এই ঐতিহ্যবাহী বটবৃক্ষ বেষ্টিত মন্দিরে বহু দূর দুরান্ত থেকে সুফল লাভের আশায় বহু মানুষ আসেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে বেশ রহস্যময় হয়ে ওঠে স্টেশনের পরিবেশ। স্টেশনের বাইরে তাকালেই দেখা যায় গাছ-গাছালিতে জোনাকি পোকার খেলা। হাজার হাজার জোনাকি জ্বলে ওঠে গাছের সারিতে। মনে হয় আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ যেন মাটিতে নেমে এসেছে।
Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।