সংবাদ সংস্থা: সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি | তাঁর জন্ম ১৮৯৫ সালে হাওড়ার বর্তমান উদয়নারায়নপুরের অন্তর্গত খিলার বড়ুইপুরে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে | পিতা ছিলেন গোপীমোহন দাশ | মাতা বিরাজময়ী দেবী।অভাবের সংসার | পরিবারের সকলের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় হওয়াই দুস্কর | ছোটবেলায় গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে গ্রামীন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কবিরাজ তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় তিনি জীবিত। ঠাকুরমা অসুস্থ ছেলের নাম রাখেন “অ্যলা ছেলে”। এই অ্যলা ক্রমে হয়ে যায় “আলা”। তাঁর পিতৃদত্ত নাম সুরেন্দ্রমোহন দাশ | কিন্তু বাঙালির কাছে তিনি আলামোহন দাশ। ব্যবসা নাম শুনলেই বাঙালির গায়ে জ্বর চলে আসে। তবে ব্যবসাকে সঙ্গী করেই নাম কামিয়েছিলেন আলামোহন দাশ | হাওড়ার এঁদো গলি থেকেই তাঁর পথ চলা শুরু। তাঁর নামেই গড়ে ওঠে আজকের হাওড়ার অন্যতম জনবহুল এলাকা “দাসনগর”। এখানেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য। বাঙালি যে ব্যবসা করতে পারে সেটা তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন | আলা তখন আট বছরের। হঠাৎ করেই মহামারি লেগে যায় তাঁর পরিবারে। পরিবারের নিশ্চিহ্ন হওয়ার জোগাড় হয় রোগের ধাক্কায়। বাবা গোপীকে কোনরকমে বাঁচানো গেলেও খরচ সামলাতে গিয়ে ঘটি বাটি বেচে পথে বসতে হয়। এমত অবস্থায় পরিবারের যাদুর কাঠির রূপ নেয় পৈতৃক বাড়ির ঘরের কোন থেকে পাওয়া এক বস্তা কয়েন। সেই কয়েনই বাঁচিয়ে দেয় আলার পরিবারকে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই ১৪ বছর বয়সে তাকে উপার্জনের হাল ধরতে হয়। আলামোহন কলকাতায় কাকার বাড়ি চলে আসেন। লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে বালক বয়সেই ফেরি করতে হচ্ছিল মুড়ি। রতিকান্ত দে’র থেকে খই মুড়ি কিনে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত সেই লড়াই। কিন্তু ছিল অদম্য সাহস ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা | ছিল অটল মনোবল ও সৎসাহস | ছিল অবিচল সত্যনিষ্ঠা ও শ্রমনিষ্ঠা | কলকাতা শহরে মজুর, সেলসম্যান ইত্যাদির কাজ করার পর নিজে খাদ্য শষ্যের দোকান তৈরি করেন। প্রথমে ছোট ব্যবসা করলেও পরে তিনি বৃহৎ শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ল | তারপর দৃঢ়চেতা আলমোহন সামান্য মুনাফা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চললেন সিঁড়ি বেয়ে দীর্ঘ পদক্ষেপে । আলামোহন মনে প্রানে বাঙালি ছিলেন। পুঁথিগত কলেজের ডিগ্রি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পাঠ করেন। হাওড়া কেমিক্যাল ফ্যাকটরি তাঁর সৃষ্ট প্রথম শিল্পোদ্যোগ। কিছু বাঙালি শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে তিনি ১৯৩০ সালে তিনি হাজার বিঘা জমির উপর ইন্ডিয়া মেশিনারি কোম্পানি স্থাপন করেন | উৎকৃষ্ট মানের লেদ, ওজন যন্ত্র, ছাপার যন্ত্র তৈরী হত তার কারখানায়। ১৯৩৭ সালে হাওড়ার শানপুরে ভারত জুট মিল স্থাপন করেন যা উদ্বোধন করেছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ওই বছরেই পান “কর্মবীর” পুরস্কার। আর্থিক সচ্ছলতা ও লাভের মুখ দেখার পর আলামোহন ১৯৪১ সালে হাওড়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানী, ১৯৪২ সালে এশিয়া ড্রাগ কোম্পানী স্থাপন করেন। আরতি কটন মিল, দাস সুগার কোম্পানী তৈরী করা তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব। সেইসময় দেশের পাট শিল্পের প্রান কেন্দ্র ছিল আরতি কটন মিল। এখন যা চলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে | তিনি নিজস্ব ব্যাংকের ব্যবসাও করেছিলেন। বাংলায় তাঁর ব্যাংকের ১২ থেকে ১৪ টি শাখা ছিল। স্কুল, মন্দির নির্মান, পুকুর খনন ইত্যাদি জনকল্যানমূলক কাজ করে গেছেন আলামোহন দাস। তিনি তাঁর গ্রামে পিতার নামে খিলা গোপি মোহন শিক্ষা সদন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে আমতা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিধানসভার সদস্য হন। ১৯৬৯ সালে চুয়াত্তর বছর বয়সে পরলোকগমন করেন বাংলা ও বাঙালির গর্ব আলামোহন দাশ | তিনি মারা যাওয়ার পর এই বিশাল সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেনি পরবর্তী প্রজন্ম। পরে রয়েছে শুধু আলামোহন সাম্রাজ্যের ফসিলটুকু। দাসনগরের মোড়ের মাথায় তাঁর মূর্তিটা এখনও যেন বলছে বাঙালি গা ঝাড়া দিলে এখনও দেখিয়ে দিতে পারে। তথ্য ও ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সংস্থা: সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি | তাঁর জন্ম ১৮৯৫ সালে হাওড়ার বর্তমান উদয়নারায়নপুরের অন্তর্গত খিলার বড়ুইপুরে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে | পিতা ছিলেন গোপীমোহন দাশ | মাতা বিরাজময়ী দেবী।অভাবের সংসার | পরিবারের সকলের দুবেলা দুমুঠো ভাত জোগাড় হওয়াই দুস্কর | ছোটবেলায় গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে গ্রামীন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কবিরাজ তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায় তিনি জীবিত। ঠাকুরমা অসুস্থ ছেলের নাম রাখেন “অ্যলা ছেলে”। এই অ্যলা ক্রমে হয়ে যায় “আলা”। তাঁর পিতৃদত্ত নাম সুরেন্দ্রমোহন দাশ | কিন্তু বাঙালির কাছে তিনি আলামোহন দাশ। ব্যবসা নাম শুনলেই বাঙালির গায়ে জ্বর চলে আসে। তবে ব্যবসাকে সঙ্গী করেই নাম কামিয়েছিলেন আলামোহন দাশ | হাওড়ার এঁদো গলি থেকেই তাঁর পথ চলা শুরু। তাঁর নামেই গড়ে ওঠে আজকের হাওড়ার অন্যতম জনবহুল এলাকা “দাসনগর”। এখানেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য। বাঙালি যে ব্যবসা করতে পারে সেটা তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন | আলা তখন আট বছরের। হঠাৎ করেই মহামারি লেগে যায় তাঁর পরিবারে। পরিবারের নিশ্চিহ্ন হওয়ার জোগাড় হয় রোগের ধাক্কায়। বাবা গোপীকে কোনরকমে বাঁচানো গেলেও খরচ সামলাতে গিয়ে ঘটি বাটি বেচে পথে বসতে হয়। এমত অবস্থায় পরিবারের যাদুর কাঠির রূপ নেয় পৈতৃক বাড়ির ঘরের কোন থেকে পাওয়া এক বস্তা কয়েন। সেই কয়েনই বাঁচিয়ে দেয় আলার পরিবারকে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই ১৪ বছর বয়সে তাকে উপার্জনের হাল ধরতে হয়। আলামোহন কলকাতায় কাকার বাড়ি চলে আসেন। লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে বালক বয়সেই ফেরি করতে হচ্ছিল মুড়ি। রতিকান্ত দে’র থেকে খই মুড়ি কিনে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত সেই লড়াই। কিন্তু ছিল অদম্য সাহস ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা | ছিল অটল মনোবল ও সৎসাহস | ছিল অবিচল সত্যনিষ্ঠা ও শ্রমনিষ্ঠা | কলকাতা শহরে মজুর, সেলসম্যান ইত্যাদির কাজ করার পর নিজে খাদ্য শষ্যের দোকান তৈরি করেন। প্রথমে ছোট ব্যবসা করলেও পরে তিনি বৃহৎ শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ল | তারপর দৃঢ়চেতা আলমোহন সামান্য মুনাফা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চললেন সিঁড়ি বেয়ে দীর্ঘ পদক্ষেপে । আলামোহন মনে প্রানে বাঙালি ছিলেন। পুঁথিগত কলেজের ডিগ্রি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পাঠ করেন। হাওড়া কেমিক্যাল ফ্যাকটরি তাঁর সৃষ্ট প্রথম শিল্পোদ্যোগ। কিছু বাঙালি শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে তিনি ১৯৩০ সালে তিনি হাজার বিঘা জমির উপর ইন্ডিয়া মেশিনারি কোম্পানি স্থাপন করেন | উৎকৃষ্ট মানের লেদ, ওজন যন্ত্র, ছাপার যন্ত্র তৈরী হত তার কারখানায়। ১৯৩৭ সালে হাওড়ার শানপুরে ভারত জুট মিল স্থাপন করেন যা উদ্বোধন করেছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ওই বছরেই পান “কর্মবীর” পুরস্কার। আর্থিক সচ্ছলতা ও লাভের মুখ দেখার পর আলামোহন ১৯৪১ সালে হাওড়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানী, ১৯৪২ সালে এশিয়া ড্রাগ কোম্পানী স্থাপন করেন। আরতি কটন মিল, দাস সুগার কোম্পানী তৈরী করা তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব। সেইসময় দেশের পাট শিল্পের প্রান কেন্দ্র ছিল আরতি কটন মিল। এখন যা চলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে | তিনি নিজস্ব ব্যাংকের ব্যবসাও করেছিলেন। বাংলায় তাঁর ব্যাংকের ১২ থেকে ১৪ টি শাখা ছিল। স্কুল, মন্দির নির্মান, পুকুর খনন ইত্যাদি জনকল্যানমূলক কাজ করে গেছেন আলামোহন দাস। তিনি তাঁর গ্রামে পিতার নামে খিলা গোপি মোহন শিক্ষা সদন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালে আমতা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বিধানসভার সদস্য হন। ১৯৬৯ সালে চুয়াত্তর বছর বয়সে পরলোকগমন করেন বাংলা ও বাঙালির গর্ব আলামোহন দাশ | তিনি মারা যাওয়ার পর এই বিশাল সাম্রাজ্য ধরে রাখতে পারেনি পরবর্তী প্রজন্ম। পরে রয়েছে শুধু আলামোহন সাম্রাজ্যের ফসিলটুকু। দাসনগরের মোড়ের মাথায় তাঁর মূর্তিটা এখনও যেন বলছে বাঙালি গা ঝাড়া দিলে এখনও দেখিয়ে দিতে পারে। তথ্য ও ছবি: সংগৃহীত