বগটুইয়ের ভস্মভূমিতে কি বাস্তবের গফুরের জন্য বিচারপ্রার্থী পোষ্য মহেশ?  

Spread the love

সংবাদ সংস্থা: শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পে মহেশের জন্য আল্লার কাছে বিচার চেয়েছিল গফুর। এবার কি তবে উল্টোটা? গফুরের জন্য মহেশের বিচার চাওয়ার পালা? মনিবের শূন্যতায় বীরভূমের দগ্ধভূমি বগটুইয়ের সোনা শেখের উঠোনে ঠায় দাঁড়িয়ে হত্যালীলার নীরব জীবন্ত সাক্ষী অর্ধদগ্ধ হয়ে যাওয়া তাঁর প্রিয় পোষ্য। বগটুই গণহত্যায় আগুনের লেলিহান শিখা কেড়েছে একাধিক তরতাজা প্রাণ। দগ্ধভূমির তাপে পুড়েছেন বাস্তবের গফুর সোনা শেখও। লেলিহান শিখা শরীরে থাবা বসালেও কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছে সোনা শেখের প্রিয় গরু, আজকের মহেশ। শরীর ক্ষতবিক্ষত হলেও তার ডাগর চোখদুটো খুঁজে বেড়াচ্ছে ‘মনিব’ সোনাকে। কিন্তু হায়! প্রতিশোধের আগুনে যে ছারখার হয়ে গিয়েছেন সোনা। তাই পোষ্যর পেটের ডাক শুনেও খিদে মেটাতে আসবেন না আর তিনি। অথচ জীবদ্দশায় এক মুহূর্তও নাকি এই পোষ্যকে নিজের চোখের আড়াল করতেন না সোনা। কাছেপিঠে হোক বা কয়েক ক্রোশ দূরে, আত্মীয়ের বাড়িতে গেলেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন গরুটাকে। যত্নের প্রশ্নে পান থেকে চুন খসুক তাও চাইতেন না। আগুনে পুড়েছে অবলা সেই প্রাণীর শরীরও। প্রশাসনের উদ্যোগে যদিও ঘটনার পরদিনই চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। তবে তার পায়ে এখনও গভীর ক্ষত। উঠে ঠিকমত দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। সুস্থ করতে মলম ওষুধ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। শরীরে কিছুটা জোর পেতেই খোঁড়াতে-খোঁড়াতে ফের চলে এসেছে মনিব সোনা শেখের দুয়ারে। খিদে পেটে বার বার খাবার জায়গায় মুখ ডুবিয়ে যাচ্ছে। আধপোড়া ঘরটার দিকে তাকিয়ে হাঁক দিচ্ছে বারবার। আর তাকিয়ে থাকছে ফ্যাল-ফ্যাল করে। বোধহয় সেও বুঝতে পারছে আর ফিরবে না মনিব সোনা। আঁটিখানেক খড় এনে আর হয়তো কেউ রাখবে না তার সামনে। গল্পে তো ক্ষুধার রাজ্য থেকে মহেশকে মুক্তি দিয়েছিল খোদ গফুরই। কিন্তু বাস্তবের গফুর যে জীবিত নেই! বেঁচে রয়েছে একা পোষ্য মহেশ। মনিব ছাড়া তার ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কয়েক আঁটি খড়ের যোগান যে কত কষ্টকর, বেশ টের পাচ্ছে এই ক’দিনে। মহেশ গল্পের শেষ লগ্নে ঠিক যেমন গফুর উচ্চৈঃস্বরে বলেছিল, ‘আল্লা! আমার মহেশ তেষ্টা নিয়ে মরেচে। তার চরে খাওয়ার এতটুকু জমি কেউ রাখেনি। যে তোমার দেওয়া মাঠের ঘাস, তোমার দেওয়া তেষ্টার জল যে তাকে খেতে দেয়নি, তার কসুর যেন তুমি কখনও মাফ করো না।’ আর আজ কি তবে সোনা শেখের মহেশ নীরবে চোখের দু’ফোঁটা জল ফেলে বলছে, “আল্লা, আমার মনিবকে যারা মারলো, তাদের কসুর তুমি ক্ষমা কোরো না!”? হয়তো, হয়তো বা!
Spread the love

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।